ঢাকা ২৩শে জানুয়ারি, ২০২১ ইং | ৯ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২০
সিলেট জেলার কানাইঘাটের রাজাগঞ্জ হলো বহু জ্ঞানী-গুনী, ওলামা-মাশায়েখ, মুহাক্কিক- মুদাক্কিক, বিজ্ঞ মুফতি, প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস, দক্ষ কলম-সৈনিকের জন্মভূমি।
এছাড়াও শাইখুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ রাহিমাহুল্লাহ ও সদরে জমিয়ত আল্লামা আবদুল করীম শাইখে কৌড়িয়া রাহিমাহুমাল্লাহ সহ বহু বুজুর্গদের দীর্ঘ স্মৃতিধন্য রাজাগঞ্জের মাটি।
বর্তমানেও এখানে আছেন প্রবীন ও নবীন অনেক আলেম, মুহাদ্দিস, মুফতি, লেখক।
গত 4 অগাষ্ট 2020ঈ. মঙ্গলবার কানাইঘাটে তরুণ আলেমদের মতবিনিময় শেষে মুহতারাম মাওলানা আতাউল কারীম মাকসুদ ও মুফতি রেজাউল কারীম আবরার ভাই 5ই অগাষ্ট বুধবার তাদের বাড়িতে যাওয়ার দাওয়াত দিলেন অত্যান্ত আন্তরিকতার সাথে আবদুল আযিয মাহবুব ভাই, তাহের ভাই ও আমাকে।
আন্তরিক এই দাওয়াতের কথা রক্ষার্তে আমরা 5ই অগাষ্ট202০ঈ. সাড়ে দশটার সময় কানাইঘাট থেকে রওয়ানা হলাম রাজাগঞ্জ তালবাড়ীর উদ্দেশ্যে।
আমাদের কাফেলায় ছিলেন মারকাযুদদাওয়া আল ইসলামীয়া ঢাকার দারুল ইফতায় কর্মরত মুফতি তাহের বিন মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ ও শাইখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকার উলুমুল হাদীস বিভাগের সহকারী মুশরিফ মুফতি আবদুল আজীজ মাহবুব হাফিযাহুল্লাহ। আর আমি অধম সহ দাওয়াতপ্রাপ্ত তিন জন-ই ছিলাম।
ঘড়ির কাটা যখন 12টা ছুঁই ছুঁই। তখন পৌঁছলাম তালবাড়ী মসজিদে। মসজিদের পাশে শুয়ে আছেন শাইখ আবদুল্লাহ হরিপুরী, শাইখে যাত্রাবাড়ী, আল্লামা ওলীপুরী, মাওলানা উবায়দুর রাহমান খান নদভী, সহ হাজারো আলেমের উস্তাদ, শত শত মুহাদ্দিসের প্রিয় শাইখ, মাদানী নগর, ঢালকানগর, জামেআ দরগাহ জমিআ ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ’র শাইখুল হাদীস, আল্লামা ইউসুফ বানুরী রাহিমাহুল্লাহর খাস শাগরিদ, শাইখুল মাশায়িখ আল্লামা কুতুব উদ্দীন জালালাবাদী রাহিমাহুল্লাহ।মসজিদে গিয়ে প্রথমে হযরতের মাকবারা যিয়ারত করি। তারপর শাইখের বাড়ীতে যাই।কারন, শাইখের সন্তানরাই আজ আমাদের মুহতারাম মেযবান।
বাড়িতে প্রবেশের আগেই বাড়ির বাহিরে এসে আমাদেরকে অভ্যার্থনা জানান তারুণ্যের প্রিয় মুখ মুফতি রেজাউল কারীম আবরার। বাড়িতেই গিয়েই দেখা হলো শাইখের বড় ছেলে মাওলানা এনামুল কারীম জুনাইদ ও মাওলানা জামিআ ইউসুফ বানুরী ঢাকার মুহতামিম মাওলানা আতাউল কারীম মাকসুদ হাফিযাহুল্লাহর সাথে। সালাম -কালাম ও হাল-পুরসীর পর্ব শেষে বসতে না বসতে হরেক রকম নাস্তা নিয়ে হাযির হলেন আমাদের আবরার ভাই। ইতিমধ্যে এসে পৌঁছলেন শাইখের কনিষ্ট সন্তান প্রিয় শিল্পী আনোয়ারুল কারীম মুস্তাজাব ভাই।
নাস্তা করতে করতে শুরু হলো ইলমী মুযাকারা, তাফরিহী বাত-চিত, বরণ্যদের স্মৃতিচারণ ও সমকালীন প্রসঙ্গ সহ নানা আলোচনা।যুহরের আযান হয়ে গেলে নামাযে চলে গেলাম সবাই।
নামাযের পর আবারো মাকবারায় গেলাম। যিয়ারত করলাম। খলীফায়ে মাদানী হাজী আব্রু মিয়া সাহেব রাহিমাহুল্লাহর মাকবারা দেখলাম।ছোটকালে যখন ভুগোল পড়ি, তখন প্রথম হাজী আব্রু মিয়া সাহেবের প্রথম নাম শুনি।
নামায পড়ে ঘরে এসে আবারো শুরু হলো আলোচনা। কিছুক্ষণ পর দুপুরবেলা খাবার হাযির করা হলো।গরুর মাংশ ভুনা, মাছ ভাজি, মাছ ভুনা, সহ এত্তো বেশি আইটেমের খাবার যে সব খাবার প্লেটে নেয়ার সুযোগ-ই হয় নি। আমার কাছে সবচে মজা লেগেছে বাশের খরিলের (ছোট বাশ) তরকারী।আমি এটাই একধিকবার প্লেটে নিয়েছি।
মাওলানা এনামুল কারীম জুনাইদ, মুহতারাম আতাউল কারীম মাকসুদ, আবরার ভাই ও মুস্তাজাব ভাই সহ সকলে এক সাথে বসে খাবার খেয়েছি।
মেহমাননওয়াজি ছিলো আন্তরিকতায় ভরপুর। ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতার কোন কমতি ছিলো না। সত্যি এমন আচরণে আমি মুগ্ধ।
খাবারের পর একটু -আধটু বিশ্রাম নিতে নিতে খোশ গল্প চলতে লাগলো। আছরের কিছু পূর্বে বাড়ি থেকে বের হলাম।মাওলানা মাকুসদ সাহেব সহ তিন ভাই আমাদেরকে আধা কিলোমিটার পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। এমন আন্তরিকতা আসলেই ভুলার নয়। আসলে বড়রা এমনি হয়।
আসরের নামায কোনাগ্রাম মসজিদে পড়লাম। সেখানে নামাযের পর মিফতাহুল উলুম ওয়াল ফুনুনের লেখক, হাদিস বিশারদ শাইখুল হাদিস জালাল উদ্দীন হাফিযাহুল্লাহকে দেখলাম। আরো দেখা হল তার দুই সুযোগ্য সন্তান ঢাকা হাজিপাড়া মাদরসার ইফতার দায়িত্বশীল মুফতি জাকির ও মুগদা মাদরসার মুহাদ্দিস মুফতি শাকির হাফিযাহুমাল্লাহর সাথে। সালাম-কালাম হল।
এরপর
আরবি ইনশার প্রখ্যাত কিতাব, আল হাদিয়াতুল মারযিয়্যা, যা বিভিন্ন মাদরসায় সিলেবাসভুক্ত, যা আমিও পড়েছি, বইটির লেখক, প্রখ্যাত মুফতি ও আলিম, মাওলানা মুফতি রাহমাতুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহর মাকবারা যিয়ারত করলাম।এতে আমার অনেকদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো।যা লালন করতাম মুখতাসার জামাতে পড়াকালীন বইটি পড়ার সময় থেকে। হযরতের সুযোগ্য সাহেবযাদা হলেন, সিলেটস্থ দারুল কোরআন মাদরসার শাইখুল হাদীস মাওলানা হাবিবে রাব্বানী চৌধুরী।
এছাড়া হযরত জাওয়াদ পারকুলী ও আল্লামা ইসহাক তালবাড়ীর মাকবারা দূরে হওয়ায় যাওয়ার সুযোগ হয় নি।
পথিমধ্যে কোন এক মাকসাদে মাওলানা মাকসুদ সাহেবের সাথে চলে গেলাম তাঁর খালার বাড়িতে। বাড়িটি একেবারে সুরমা নদীর তীরেই অবস্থিত। অল্প সময়ে অধিক মেহমানদারী হয়েছে। মেজবানিতে তাদের সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
মাগরিব কিছু আগে হয়ে সুরমার তীরে গিয়ে বসলাম। হিমেল মৃদু বাতাস, আর নদীর ঢেউ উপভোগ করতে করতে আবারো গল্পসল্পের আড্ডা জমে উঠলো।কিন্তু তা বেশি স্থায়ী হলো না। কারন মাগরিবের সময় একবারে নিকটে।
ধুরু ধুরু বুকে বিদায় নিলাম তাদের কাছ থেকে।বিদায়ের কষ্ট বুকে নিয়ে খেয়া নৌকায় সুরমা নদী পার হলাম। মাগরিবের নামায রামধা বাজারে মসজিদে পড়ে ঐতিহ্যবাহী রামধা মাদরাসা একটু ঘুরে দেখলাম। এরপর জকিগঞ্জ রোড দিয়ে CNG যোগে কানাইঘাট এসে পৌঁছলাম।
জকিগঞ্জ রোড হয়ে আসার কারনে অনেকের সাথে দেখা হয় নি।বিশেষকরে মুহতারাম আবদুল কারীম মাদানী, নাজমুল ইসলাম কাসিমী, আলী আবিদিন ভাই, মুফতি শাব্বির ভাই প্রমুখের সাথে।
যাক, আবার কখনো কোথাও দেখা হবে সেই প্রত্যাশা করি।
মাহমুদিয়া লাইব্রেরিতে দেখা হলো মুফতি খাইরুল আমিন মাহমুদী সহ অনেকের সাথে। কথা-বার্তা হলো। রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় শেষতক রাত্রি যাপন করলাম মাহবুব ভাইয়ের বাড়িতে।
মাওলানা আবদুল্লাহ বিন ইসমাঈল
সাহিত্য সম্পাদক, শাইখুল হাদীস আল্লামা শিহাব উদ্দীন রাহিমাহুল্লাহ স্মৃতি পরিষদ বাংলাদেশ
প্রধান উপদেষ্টা: এড. শাহীনূর পাশা চৌধুরী
উপদেষ্টা সম্পাদক: আব্দুল গাফফার
সম্পাদক: মাসুম আল মাহদী
নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল্লাহ সালমান
বার্তা সম্পাদক: ফরিদ আহমদ ফেরদাউস
অফিস: ৩য় তলা রংমহল টাওয়ার, বন্দরবাজার, সিলেট
ইমেইল: news.jonokollan24@gmail.com
ফোন: 008801719291430
Design and developed by syltech